ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ৩ নং অচিন্তপুর ইউনিয়নের মুখুরিয়া গ্রামে ৪/৫ শত বছর আগের একটি প্রাচীন মসজিদ অবস্থিত। এই মসজিদের ঈমাম আলহাজ্ব মাওলানা হযরত মো. নূরুল আমীন (৯০) দৈর্ঘ্য ৬০ বছরের ঈমামতি করেছেন এবং স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে নিজ বাড়ি চলে যান। জীবনের বাকি বছর নিজ গ্রামে কাটিয়ে দিবেন বলে কয়েক বছর ধরে তিনি মসজিদ কমিটিকে বলে আসছেন। গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই ২০২১) ২:৩০মি. মসজিদ প্রাঙ্গনে এ সংবর্ধনা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।এর আগে তিনি জুমার নামাজের শেষ ইমামতি করে পূর্ব পূরুষদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সকলের শান্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। মো. আব্দুল বারি মাস্টার সভাপতিত্বে বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশে বক্তৃতা করেন- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান পাঠান সেলভী, তরুণ শিল্পপতি মোহাম্মদ গোলাম সামদানী খান সুমন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমূল হুদা খান অপু, সাবেক পৌর কাউন্সিলার মো. ফারুকুজ্জামান, গৌরীপুর সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মদ, আ. খালেক, মো. শহীদুল ইসলাম, মিন্টু মিয়া প্রমূখ। তাছাড়া এখানে উপস্থিত ছিলেন গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান উদ্দিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল হুদা লিটন, সাংবাদিক মো. তোফাজ্জল হুসেন, বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম, ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমূল হুদা খান অপু বলেন, ঈমাম আলহাজ্ব মাওলানা হযরত মো. নূরুল আমীন একজন দক্ষ কর্মী, তিনি কাজের প্রতি খুবই আন্তরিক এবং সবসময় পেয়েছেন সাধুবাদ। ৬০ বছরের ঈমামতি জীবনের অবসান ঘটিয়ে এবং বয়সের বার্ধক্যতা কারণে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিলেন। প্রাচীন মসজিদ সংস্কার ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, অভিক জামানের পৃষ্ঠপোষকতা ও দিক নির্দশনা কারণে মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং আরো ১২০ জন মুসল্লীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো আ. বারি মাস্টার, জানতে চাইলে তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘এক গম্বুজ মসজিদটির নির্মাণের সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। মসজিদটির নির্মাণের বয়স ৫শত বছর অধিক হতে পারে। শত বছর আগে মসজিদের চার দিকে গভীর জঙ্গল ছিল। বর্তমান মসজিদের নিজস্ব জায়গায় ১৯০ শতাংশ জমি রয়েছে। গ্রামের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের পরিবারের সদস্য নিয়ে নামাজ পড়তে এখানে আসতেন। পরবর্তী সময়ে মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে এটির সামনে একটি বারান্দা নির্মাণ করা হয়। ’ যেহেতু এটি একটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা সেহেতু এই মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবী রাখে। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে মসজিদটি টিকিয়ে রাখা দরকার।
প্রাচীন জনপদ হওয়ার কারণে নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য এখানে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রাচীন মসজিদগুলির গঠনশৈলীর স্থাপত্য বিভিন্ন এলাকাকে চিহ্নত জও সমৃদ্ধ করেছে। পাঠান বা সুলতান হোসেন শাহ অথবা দিল্লির সম্রাটেরা মোমেনসিং পরগনার নানা মসজিদ নির্মাণ ও পুকুর খননও করেছিলেন বলে জানা যায়। কথিত রয়েছে, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার হযরত টেনু শাহ (রহ.) মাজারের কাছে মুখুরিয়া প্রাচীন জামে মসজিদটি কোন মুঘল বা পাঠান শাসক তৈরি করেছিলেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের কামরুপ শাসনের অবসান হলে মুসলিম সুলতানরা রাজ্য শাসন করেন। মুসলিম শাসকরা যখনই কোনো অঞ্চল বা স্থান জয় করেছেন, তখনই তারা সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। ময়মন
সিংহ অঞ্চলের মুঘল বা সুলতানি আমলের বেশ কিছু মসজিদ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।